OUR HISTORY
১৯৬৫ সালে ইউনিভার্সিটি উইমেন্স ফেডারেশন কলেজ নামে যে মহিলা কলেজের অগ্রযাত্রা শুরু হয়, তা ড. মালিকা আল রাজীর চিন্তার ফসল । ড. মালিকা আল রাজী বিদেশে অবস্হান কালে ফেডারেশন অব ইউনিভার্সিটি উইমেনের সংস্পর্শে আসেন এবং দেশে ফিরেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত মহিলাদের নিয়ে গঠন করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ফেডারেশন অব ইউনিভার্সিটি উইমেন যা আন্তর্জাতিক ফেডারেশনের অধিভুক্ত । ড. মালিকা আল রাজী ফেডারেশনের এক সভায় মেয়েদের জন্য একটি কলেজ ষ্হাপনের প্রস্তাব করেন – কারণ তাঁর মনের মাঝে সুপ্ত বাসনা ছিল এই কলেজের মধ্যেই ফেডারেশন বেঁচে থাকবে এবং শিক্ষায় অনগ্রসর নারী জাতির অগ্রগতির পথ উন্মুক্ত হবে ।
এই উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যকে মাথায় রেখে ফেডারেশনের কতিপয় বিদ্যানুরাগী মহিলা সদস্য ১৯৬৫ সালে ইউনিভার্সিটি উইমেন্স ফেডারেশন কলেজটি ধানমন্ডির ৬ নং সড়কের একটি ভাড়া বাড়িতে জুলাই ১৯৬৫ সালে আত্ম প্রকাশ করে । প্রসঙ্গত বাড়িটি ছিল শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মায়ের বাসা । এই কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্নে জড়িত ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সংগঠনের সদস্য মিসেস তাসলিমা আবেদ, ডা. মালিকা আল রাজী, দিল আফরোজ হক, মিসেস আফিফা হক, খোরশেদী আলম, শাহানারা আলম, ড. ফাতেমা সাদেক প্রমুখ বিদ্যাসৎসাহী মহিলারা ।
এই কলেজের উদ্যোগীদের লক্ষ্য ছিল মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা দেয়া- সেজন্য তাঁরা কলেজটিতে মেয়েদের বাণিজ্য শাখায় পড়ার সুযোগ সৃষ্টি করেন । এটাই প্রথম মহিলা বাণিজ্য কলেজ ।
পুরাতন কলেজ হওয়া সত্ত্বেও শুধু আবাসন সমস্যার জন্য বিজ্ঞান শাখা, স্নাতক (সম্মান) বা পাস কোর্সে বাণিজ্য শাখা খোলা সম্ভব হয়নি । যদিও ১৯৭২ সালে ডিগ্রী (পাস) কলা অনুষদ খোলার অনুমোদন পাওয়া যায় । ১৯৯৩ সালে ডিগ্রী (বাণিজ্য শাখা), ২০০০-২০০১ শিক্ষাবর্ষে উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান শাখা, ২০০৪-২০০৫ শিক্ষাবর্ষে পাঁচটি বিষয়ে (ইংরেজি, ব্যবস্থাপনা , মার্কেটিং, সমাজকর্ম ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান) সম্মান কোর্স খোলার অনুমতি পাওয়া যায় ।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন মিসেস রাজিয়া মতিন চৌধুরী, যিনি পরবর্তী সময়ে ( ২৮/০৭/১৯৯৭ – ১৯/১০/২০০১) কলেজের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।
ড. মালিকা আল রাজী সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে কলেজটিকে দাঁড় করানোর জন্য যথেষ্ট শ্রম দিয়েছেন । কলেজের মাসিক বাড়ি ভাড়া ৬১০.০০ টাকা ও শর্ত পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আসবাবপত্র যোগাড় করা খুব কষ্টসাধ্য ছিল । তবে প্রতিষ্ঠাতাদের অদম্য আগ্রহ ও অকুতোভয় নিষ্ঠা সব বাধাকে অতিক্রম করতে সাহায্য করেছিল । বোর্ডের অধিভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হলে, গ্যারান্টার হয়ে এগিয়ে এলেন মরহুম ড. আবদুল মতিন চৌধুরী, মরহুম এস. এম. আবেদ এবং জনাব মোহাম্মদ আলী । আর কলেজে পড়ানোর জন্য এক ঝাঁক আত্ম নিবেদিত শিক্ষক যারা নাম মাত্র বা বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসেন । – এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- মোসলেমা নোমান, হোসনে আরা বেগম, নার্গিস হোসেন, জরিনা হোসেন, আব্দুল জলিল, সালমা চিশতী, মি: আহমেদ উল্লাহ, গোলাম সারওয়ার, কমর চৌধুরী ও সালমা সুফিয়া । কলেজটিতে প্রথমে শুধু উচ্চ মাধ্যমিক ক্লাশে বাণিজ্য ও মানবিক শাখা চালু ছিল । ১৯৭৭ সাল পর্যন- বাণিজ্য শাখার দায়িত্বে ছিলেন মরহুম মোহাম্মদ আলী ।
এই কলেজটির জন্মলগ্ন থেকেই আবাসন সমস্যা কলেজটির সমপ্রসারনে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে । স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে আবেদনের প্রেক্ষিতে ধানমন্ডির ১৩/১ সড়কের একটি পরিত্যক্ত বাড়ি বরাদ্দ করা হয়েছিল । কিন্তু মালিকানা মামলায় জয় লাভ করে বাড়ির মালিক তার মালিকানা লাভ করায় সেখান থেকে কলেজের বরাদ্দ বাতিল করা হয় এবং যাযাবরের জীবনের সূত্রপাত হয় । প্রথম দিকে কলেজটি ৬ নং সড়কের ১৯ নম্বর বাড়িতে , পরে লেক সার্কাস স্কুলে, পরে আবার ৬ নং সড়কের বাড়িতে ফিরে আসা । ঢাকা সিটি কলেজে সাময়িক অবস্হান, সেখান থেকে ৪ নং সড়কের ছোট এক বাড়ি ঘুরে অবশেষে ১৯৭৭ সালে বর্তমানে ৬নং সড়কের এই পরিত্যক্ত বাড়িটি কলেজের স্হায়ী ঠিকানা হয় । ১৯৮২ সালে সরকারের বিক্রয় প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বাড়ির মূল্যের প্রথম কিস্তির ১,১৬,০০০.০০ টাকা পরিশোধ করার পরও বাড়ির মালিকানা পেতে দীর্ঘ ১৫ বছর লেগেছে । আর এই পনর বছরের আইনী যুদ্ধে কলেজ সাহায্য পেয়েছে গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য প্রয়াত এম. এম. আবিদ আলী, প্রয়াত এটর্নী জেনারেল আমিনুল হক তাঁর সহকমী বৃন্দ, স্বর্গীয় এস. আর. পাল এবং অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদ প্রমুখ শুভার্থীদের ।
রায় কলেজের পক্ষে হলেও তা কার্যকরী করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অসুবিধা হয়েছিল । সেই অসুবিধা দূর করতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন কলেজের শুভানুধ্যায়ী সংষ্হাপন মন্ত্রনালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব ( বর্তমানে তথ্য কমিশনার, সাবেক সচিব ) আবু তাহের এবং (মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর এপিএস-১) ওবায়দুল রবিউল আলম মুকতাদির এবং ঢাকার তৎকালীন কমিশনার মরহুম নিজামউদ্দিন । তাঁদের ঐকান্তিক চেষ্টায় শেষ অবধি জমি ও বাড়ি কলেজের নামে নিবন্ধীকরণ এবং কলেজ নির্মাণের অনুমতি পাওয়া গেল । আরও বিশেষভাবে স্মরণ যোগ্য অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মমতাজ আহমেদ ও শফিকুল আলম মেহেদীন (বর্তমান যুগ্ম সচিব) ।
সীমিত সম্পদ ও অসীম সাহস নিয়ে বিগত গভর্নিং বডির সদস্যদের আন-রিক সহযোগিতায় ২০০১ সালে তৎকালীন গভর্নিং বডির সভাপতি মিসেস রাজিয়া মতিন চৌধুরী কলেজের ভিত্তি স্হাপন করেন । কলেজের শিক্ষক কর্মচারীদের আর্থিক সুবিধা প্রত্যাহার এবং তাঁদের বিনিয়োগকৃত ভবিষ্য তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে নির্মিত হয়েছে তিন তলা ভবন । শিক্ষক কর্মচারীদের দেয়া ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ২০০৬ সালে ।